কর্মসংস্থান ব্যাংক অনলাইন লোন আবেদন
কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন অনলাইন আবেদন সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। কেননা এ আর্টিকেল এর মধ্যে কি ভাবে কর্মসংস্থান ব্যাংকে লোন আবেদন করতে হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আলোচনা করেছি। আশা করি আজকের আর্টিকেলটি পরলে কর্মসংস্থান ব্যাংকে লোন আবেদন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পাবেন।
কর্মসংস্থান ব্যাংক বাংলাদেশের যুবকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক প্রতিষ্ঠান। মূলত এই ব্যাংক নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের লোনের সুবিধা প্রদান করে থাকে, যা তাদের জীবনযাত্রার মানের উন্নতি করতে সহায়তা করে। বর্তমান সময়ে প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে কর্মসংস্থান ব্যাংকও তাদের লোনের আবেদন প্রক্রিয়াকে সহজ এবং দ্রুত করার জন্য অনলাইন ব্যবস্থা চালু করেছে। এ পোস্টে আমরা কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে অনলাইনে লোন আবেদন করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
পোস্ট সূচিপত্র.
কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন অনলাইন আবেদন
কর্মসংস্থান ব্যাংকের মূলত দুইভাবে লোনের জন্য আবেদন করা যায়। প্রথমত সরাসরি ব্যাংকে গিয়ে ও দ্বিতীয়ত অনলাইনের মাধ্যমে। তবে আপনারা অনেকেই আছেন যারা অনলাইনে লোনের জন্য আবেদন করতে চান? বিশেষ করে তাদের জন্য নিচে কর্মসংস্থান ব্যাংকের অনলাইনে কিভাবে লোন আবেদন করা সম্ভব তার নিচে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করব-
কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন অনলাইন আবেদন করার জন্য কর্মসংস্থান ব্যাংকের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে যেতে হবে। কর্মসংস্থান ব্যাংক ওয়েবসাইট লিংক- https://kb.gov.bd/
কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন আবেদন ফরম
আবেদন ফরম পূরণ করার নিয়ম
উপরোক্ত নিয়মে আপনি চাইলে খুব সহজেই ঘরে বসে কর্মসংস্থান ব্যাংক অনলাইন এর মাধ্যমে যে লোন আবেদন করা যায় সেই লোন আবেদন করতে পারবেন।
কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে লোন আবেদন
- প্রথমেই আপনার নিকটস্থ কর্মসংস্থান ব্যাংক শাখায় যেতে হবে এরপর ব্যাংকে কর্মরত কোন অফিসারকে জানাতে হবে যে আপনি লোন নিতে চাচ্ছেন।
- এরপর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আপনার কাছ থেকে বেশ কিছু তথ্য জানতে চাইবে, কেন লোন নিতে চাচ্ছেন? লোন নিয়ে কোন প্রকল্পে কাজ করবেন? উক্ত প্রকল্পের উপর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন কিনা যাবতীয় তথ্যগুলো।
- যাবতীয় তথ্য জানা হয়ে গেলে লোন গ্রহনের ফরম পূরণ করতে দিবে। লোনের ফরমটি সঠিক ভাবে পূরণ করতে হবে।
- তারপর আপনার ভোটার কার্ডের ফটোকপি, সাম্প্রতিক তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি, জামিনদারের সাক্ষর এবং আরো প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলো দিয়ে জমা দিতে হবে।
- কর্মসংস্থান ব্যাংকে লোন আবেদন করার পর ১ মাসের ভেতরে লোন অনুমোদন হয়ে যায়। এই সময়টুকু আপনাকে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে।
কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন নেওয়ার যোগ্যতা
কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন আবেদন করতে হলে বেশ কিছু যোগ্যতা প্রয়োজন হবে। এ সকল যোগ্যতাকর্মসংস্থান ব্যাংক লোন আবেদন করার সময় তথ্য প্রদান করতে হবে এবং আবেদন ফরমটি উক্ত সকল যোগ্যতার তথ্য অনুযায়ী পূরণ করতে হবে। কারণ সঠিক যোগ্যতা না থাকলে কর্মসংস্থান ব্যাংক কখনই লোন প্রদান করবে না। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার জন্য কি কি যোগ্যতা থাকতে হবে-
- প্রথমত বাংলাদেশের স্থায়ী নাগরিক হতে হবে।
- কর্মসংস্থান ব্যাংক হতে লোন নেওয়ার জন্য আপনার বয়স সর্বনিম্ন ১৮ থেকে ৬৫ এর মধ্যে হতে হবে।
- কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে লোন নিতে হলে ন্যূনতম পঞ্চম শ্রেণি পাশ হতে হবে।
- আপনি কর্মসংস্থান ব্যাংক এর যে শাখা হতে লোন নিবেন অবশ্যই আপনাকে সেই শাখার সদস্য হতে হবে।
- যেখান থেকে লোন নিবেন সেই অঞ্চলের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
- আপনি যে কর্মসংস্থান ব্যাংকের শাখা থেকে ঋণ নিবেন সে শাখার আপনাকে সঞ্চয় এবং জমানত হিসাবে কিছু টাকা জমা রাখতে হবে।
- পূর্বে কোন ব্যাংকে ঋণ খেলাপি করা যাবে না।
- কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে লোন নিতে হলে আপনার কাছে প্রয়োজনীয় কিছু ডকুমেন্ট থাকতে হবে। যেমন, ভোটার আইডি কার্ড কিংবা পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন পাওয়ার জন্য কাগজপত্র
কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে লোন পাওয়ার জন্য কিছু নির্দিষ্ট কাগজপত্র দরকার হয়। এখানে সাধারণত যা লাগতে পারে তার একটি তালিকা দেওয়া হলো-
- জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি: আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি জমা দিতে হবে।
- জন্ম নিবন্ধন সনদ (যদি প্রযোজ্য হয়): জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি না থাকে তাহলে জন্ম নিবন্ধনের একটি ফটোকপি জমা দিতে হতে পারে।
- পাসপোর্ট সাইজের ছবি: আবেদনকারীর সাম্প্রতিক পাসপোর্ট সাইজের ছবির প্রয়োজন।
- আয়ের প্রমাণপত্র: আবেদনকারীর আয়ের উৎস সম্পর্কে প্রমাণ দিতে হবে (যেমন, বেতন স্লিপ, ব্যবসার নথি ইত্যাদি)।
- ঠিকানার প্রমাণপত্র: ঠিকানার প্রমাণপত্র হিসেবে বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল বা অন্য কোনো সরকারি প্রমাণপত্র প্রয়োজন।
- ব্যবসার নথি (যদি ব্যবসার জন্য লোন প্রয়োজন হয়): ব্যবসার রেজিস্ট্রেশন সনদ, ব্যবসার আয়ের প্রমাণ ইত্যাদি।
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট: আবেদনকারীর ব্যাংক স্টেটমেন্ট ৩ থেকে ৬ মাসের জমা দিতে হতে পারে।
- লোনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিবরণ: কেন লোন নেওয়া হচ্ছে এবং কীভাবে তা ব্যবহার করা হবে এর একটি স্পষ্ট বিবরণ দিতে হবে।
কর্মসংস্থান ব্যাংকের পরিচিতি
সরকারি ও বেসরকারি অন্যান্য উদ্যোগের পাশাপাশি সরকার দেশের বেকার যুবদের কর্মসংস্থানের কথা মাথায় রেখে ১৯৯৮ সালে কর্মসংস্থান ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ ব্যাংক বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ কর্তৃক পরিচালিত। ব্যাংকটি বেকার যুবক এবং যুব মহিলাদের কর্মসংস্থানের জন্য লোন প্রদান, বিভিন্ন ধরনের সহায়তা, এবং বিনিয়োগের সুযোগ প্রদান।
আর প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা থাকার পরও ব্যাংকের সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী দেশের বেকার যুবদের এবং যুব মহিলাদের কর্মসংস্থানে সুযোগ করে দেওয়ায় এ ব্যাংক নিজেদেরকে নিয়োজিত রেখেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক সমস্যার মধ্যে বেকার সমস্যা অন্যতম প্রধান। বিভিন্ন পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে প্রায় ৩.০০ কোটি লোক বেকার। এ বিপুল বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সরকারের পক্ষে একক ভাবে সম্ভব নয়।
তাই বাংলাদেশের প্রতিটি পরিবারে একজন সদস্যের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কর্মসংস্থান ব্যাংক এ দেশের যুবসমাজের বেকারত্ব দূরীকরণের মাধ্যমে তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নিজেদেরকে আরো নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত করতে বিগত অর্থ-বছরে দেশব্যাপী ৩৩টি আঞ্চলিক কার্যালয় ও ২৭৭টি শাখার মাধ্যমে ব্যাংকের ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
কর্মসংস্থান ব্যাংক লোনের খাত
কর্মসংস্থান ব্যাংক লোনের খাত সম্পর্কে জানার জন্য প্রায় অধিকাংশ মানুষ গুগলে অনেক অনুসন্ধান করে থাকেন। আপনাদের জানার সুবিধার্থে আজকের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়লে, আশাকরি কর্মসংস্থান ব্যাংক লোনের খাত সম্পর্কে সহজেই জেনে নিতে পারবেন।
কর্মসংস্থান ব্যাংক কর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন খাতে লোন প্রদান করে থাকে। আপনি যদি বেকার থাকেন সে ক্ষেত্রে আপনি নির্দিষ্ট বিষয়ের উপরে প্রশিক্ষণ নিয়ে উদ্যোক্তা হতে পারবেন। সে জন্য আপনাকে কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন দিয়ে সহায়তা করতে পারে। কর্মসংস্থান ব্যাংক উদ্যোক্তা হতে চাইলে বিভিন্ন কাজে লোন প্রদান করে থাকে। চলুন তাহলে কোন কোন খাতে কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন প্রদান করে থাকে সে গুলো সম্পর্কে নিচে জেনে নেওয়া যাক-
- বানজ্যিক খাতে লোন
- সেবা খাতে লোন
- যানবাহন ও পরিবহন খাতে লোন
- প্রাণী সম্পদ খাতে লোন
- মৎস সম্পদ খাতে লোন
- ক্ষুদ্র কুটির শিল্প কারখানা খাতে লোন
- শিল্প কারখানা খাতে লোন
- অন্যান্য প্রকল্প খাতে লোন
উপরোক্ত যে কোন একটি বিষয়ের উপর আপনি যদি প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকেন। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই টাকার প্রয়োজন হবে তবে আপনি কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারবেন।
কর্মসংস্থান ব্যাংক লোনে সুদের হার
কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে অনেকেই লোন নিতে থাকেন। কিন্তু অনেকের জানা নেই কর্মসংস্থান ব্যাংকের লোন নিতে হলে সুদের হার সম্পর্কে। যে কোন ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার আগে সুদের হার সম্পর্কে জেনে নিতে হয়। কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে স্বল্প সুদে লোন পাওয়া যায় এবং লোন পেতে জটিল কোন শর্ত পূরণের প্রয়োজন পড়ে না। তাই চলুন কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন সুদের হার কত -
কর্মসংস্থান ব্যাংক এর লোনের সুদের হার বিভিন্ন প্রকারের লোনের জন্য ভিন্ন হতে পারে এবং এটি নিয়মিত ভাবে আপডেট হতে পারে। নিচে সুদের হারের বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হল-
- বাণিজ্যিক খাতে ১৩%
- ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প ১৩%
- কৃষি খাতে ৮ থেকে ৯%
- প্রাণিসম্পদ খাতে ১০%
উপরোক্ত কর্মসংস্থান ব্যাংকের সুদের হার দেওয়া হয়েছে। সুদের হার যে কোন সময় পরিবর্তনশীল হতে পারে, তাই লোন বা ঋণ নেওয়ার আগে কর্মসংস্থান ব্যাংকের যে কোন একটি শাখায় গিয়ে নিশ্চিত ভাবে জেনে নিতে পারবেন অথবা কর্মসংস্থান ব্যাংকের ওয়েবসাইটে গিয়ে যোগাযোগের ঠিকানায় ফোন করে বা ইমেইল এর মাধ্যমে এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নিতে পারবেন।
কর্মসংস্থান ব্যাংক কত টাকা লোন দিয়ে থাকে?
সাধারণত কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন প্রদান করার ক্ষেত্রে ৫,০০০ টাকা থেকে শুরু করে ২০,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত লোন দিয়ে থাকে। তবে অনেকেই বেশি টাকা লোন নিতে হলে অনেক ধরনের কাগজ প্রয়োজন হয়ে থাকে। যেমন আপনার ব্যাংক একাউন্টের চেক, বাড়ির দলিল ও জমির দলিল ইত্যাদি কর্মসংস্থান ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে জমা রাখতে হয়।
কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে লোন গ্রহণের পর সর্বোচ্চ কত সময় পর্যন্ত টাকা পরিশোধ করা যায় সে সম্পর্কে অনেকেই জানার আগ্রহ প্রকাশ করেন। কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে আপনি যদি লোন গ্রহণ করতে চান সেক্ষেত্রে লোনের মেয়াদ ২ বছর থেকে সর্বোচ্চ ৫ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে। লোন গ্রহণ করার ক্ষেত্রে প্রকল্পের ধরন ও মেয়াদের উপর নির্ভর করবে কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন পরিশোধ পদ্ধতি কেমন হবে। কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন পরিশোধ মাসিক, দ্বিমাসিক,ত্রৈমাসিক এবং বার্ষিক কিস্তিতে পরিশোধ করতে পারবেন।
কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন অনলাইন আবেদন-শেষ কথা
আপনারা যদি আজকের আর্টিকেলটি আপনি মনোযোগ দিয়ে পরেন তাহলে বাংলাদেশি ভাই-বোনেরা ও প্রবাসী ভাই-বোনেরা সকলেই উপকৃত হতে পারবেন। কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন অনলাইন আবেদন এই বিষয়ে আপনাদের যদি আরো কোনো তথ্য জানার থাকে তাহলে আপনারা সরাসরি কর্মসংস্থান ব্যাংক গিয়ে যোগাযোগ করতে পারেন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url